বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে আসা প্রশ্নগুলো উপযুক্ত ব্যাখ্যা ও সমাধান

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে আসা প্রশ্নগুলো উপযুক্ত ব্যাখ্যা ও সমাধান

৩৮ তম বিসিএস এর জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নত্তর।

৩৮ তম বিসিএস এর জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নত্তর।

বাংলাদেশে এই পর্যন্ত যতগুলো চাকরির পরীক্ষা হয়েছে সব গুলো পরীক্ষাতে আসা “উপন্যাস” গুলোর সমাধান দেয়া হল

বাংলাদেশে এই পর্যন্ত যতগুলো চাকরির পরীক্ষা হয়েছে সব গুলো পরীক্ষাতে আসা “উপন্যাস” গুলোর সমাধান দেয়া হল

বাংলাদেশে এই পর্যন্ত যতগুলো চাকরির পরীক্ষা হয়েছে সব গুলো পরীক্ষাতে আসা “উপন্যাস” গুলোর সমাধান দেয়া হল

বাংলাদেশে এই পর্যন্ত যতগুলো চাকরির পরীক্ষা হয়েছে সব গুলো পরীক্ষাতে আসা “উপন্যাস” গুলোর সমাধান দেয়া হল

বাংলাদেশে এই পর্যন্ত যতগুলো চাকরির পরীক্ষা হয়েছে সব গুলো পরীক্ষাতে আসা “উপন্যাস” গুলোর সমাধান দেয়া হল

বাংলাদেশে এই পর্যন্ত যতগুলো চাকরির পরীক্ষা হয়েছে সব গুলো পরীক্ষাতে আসা “উপন্যাস” গুলোর সমাধান দেয়া হল

Saturday, July 27, 2019

গুজবে এক নারীর ভাগ্য সম্পাদনায় মোঃ শেখ সাঈদী


আজ হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে ব্যারিস্টার সুমন ভাই এর একটি ফেসবুক লাইভ ভিডিও দেখে মনটা কেবলই পালাই পালাই করছে গত ২১ জুলাই চরম নৃশংসতায় পৈশাচিক উল্লাসে হত্যা করা হয়েছে তসলিমা বেগম রেণুকে। তাঁর ছোট দুই শিশুর ভবিষৎ চিত্র ফেসবুক লাইভ দেখে আমি আর অবিচলিত থাকতে পারলাম না, একদম শুরুতে আমি এই বিষয়টা নিয়ে কিছু লিখতে চাইনি কারণ লিখার অভ্যস আমার নেই বললে ও চলে কিন্তু তসলিমা বেগম রেণুর মৃত্যুর ঘটনাদৃষ্টে না লিখে থাকতে পারলাম না।
গুজব হল এমন কোন বিবৃতি যার সত্যতা অল্প সময়ের মধ্যে অথবা কখনই নিশ্চত করা সম্ভব হয় না। অনেক পন্ডিতের মতে, গুজব হল প্রচারণার একটি উপসেট মাত্র, যা অনেক ক্ষেত্রে "ভুল তথ্য" এবং "অসঙ্গত তথ্য” এই দুই বোঝাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। "ভুল তথ্য" বলতে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্যকে বুঝায় এবং "অসঙ্গতি তথ্য” বলতে বুঝায় ইচছাকৃতভাবে ভ্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করা।
যদি আরো সহজ ভাবে বলতে চাই গুজব কি তাহলে এম, ডি, গারব্রিক স্যারের বিখ্যাতপ্রবাদটি যথেষ্ট গুজব কি বোঝার জন্য, স্যার গারব্রিক বলেছেন "কেউ যদি লাল কাচের ভিতর দিয়ে সাদা পদ্মফুলের দিকে তাকায় তবে সে একটি লাল পদ্ম ছাড়া আর কিছু দেখবে না। কিন্তু সেখানে আদৌ কোনো লাল পদ্ম নেই। সুতরাং সমস্যাটা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে। তারা ভুল দৃষ্টিভঙ্গি গঠন করে”
আমি প্রবাদদৃষ্টে বলতে চাই ভুল দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গুজব সৃষ্টির প্রথম ধাপ, কারন খারাপ বলে কোনো জিনিস নেই। কোনো জিনিসকে খারাপ বলে মনে করলেই জিনিসটি খারাপ। তা না হলে খারাপ নয়। একটা জিনিস বা বিষয় খারাপ কি ভালো, তা নির্ভর করে কে কোন দৃষ্টিতে জিনিস বা বিষয়টিকে দেখেছে তার ওপর।
আজ আমাদের সমাজের কিছু মানুষ মনুষ্যত্বহীনে রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছে একমাত্র গুজবে কান দিয়ে বা গুজবে বিশ্বাসের পাত্র হয়ে অবিশ্বাসের কাজ করে। সবচেয়ে বড় প্রমাণ হল গত ২১ জুলাই চরম নৃশংসতায় পৈশাচিক উল্লাসে হত্যা করা হয়েছে তসলিমা বেগম রেণুকে। এ সময় তিনি করজোড়ে বারবার বলছিলেন আমি আমার ছেলেমেয়েকে এখানে ভর্তি করাত এসেছি। আপনারা আমাকে মারবেন না। তসলিমার এমন আর্তনাদ কেউ আমলে নেয়নি। কারোর মনেই বিন্দুুমাত্র করুণার উদ্রেক হয়নি। বরং ক’জনকে বলতে শোনা গেছে, শালিকে শেষ করে দে। আর যেন জীবনে এখানে না আসে। এই হল আমাদের সমাজের অমানুষিকতার রূপ। এ সময় তিনি চিৎকার করতে থাকেন আমি বাচ্চা ভর্তি করতে এখানে আসি। আমাকে মারবেন না। তার এ কথায় হামলাকারীরা আরও উত্তেজিত হয়ে নৃশংসতা চরম পর্যায়ে নামে। এক পর্যায়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে গেলে হামলাকারীরা চলে যায়। এরপর হাসপাতালে নেয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ঘটনাদৃষ্টে লক্ষণীয় যে এটি এমন এক মৃত্যু যার দায় এড়ানো যায় না। এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়- অন্তত ৩/৪শ’ লোক রেণুকে চারদিক থেকে ঘিরে তার ওপর হামলে পড়েছে। রেণু বার বার কিছু বলার চেষ্টা করলে তার মুখে ঘুষি মারতে দেখা গেছে একজনকে। সবাই শুধু ভিডিও করা নিয়ে ব্যস্ত কিন্তু একটা মানুষ ও তাঁকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা বা উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখি নি বরং আনন্দজনক বস্তু অবলোকন দৃষ্টি দিয়ে তৃপ্তিসহকারে ভিডিও ধারণের প্রতিযোগিতার সমপ্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছিল।
সমাজ পরিবর্তনশীল। বাংলাদেশের সমাজেও এ বৈশিষ্ট্যের ব্যতিক্রম নয়। স্বাধীনতা পরবর্তীকালিন সময় হতে এদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। শিক্ষা, প্রযুক্তি ও যোগাযোগের পরিবর্তন এদেশের সমাজ ও অর্থনীতিকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়েছে। ব্যাপক শিল্পায়ন ও নগরায়ন নারীর ভূমিকায় পরিবর্তন এনে দিয়েছে। সমাজ জীবনের এ পরিবর্তনে একদিকে যেমন পুরাতন সমস্যাগুলো জটিল রুপ ধারণ করছে, অন্যদিকে তেমনি নতুন নতুন সমস্যার উদ্ভব ঘটেছে। এই নতুন সমস্যার উদ্ভব হল একটি গুজবে কান দেওয়া। এখন সবার মনে একটি প্রশ্নই কাজ করে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রুখতে কী করণীয় বা কী ভাবে এই গুজব থেকে মুক্তি পাবডিজিটাল এই যুগে মানুষ সন্দেহের ভিত্তিতে হত্যা করবে, এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যত মানুষ এই হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করবে, তাদের সকলকেই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
 আমার বিশ্বাস, জনগণের কাছে তথ্যপ্রবাহকে যতটা অবারিত করা হবে, সাধারণ মানুষকে ধোঁয়াশা থেকে মুক্ত করার জন্য যত বেশি প্রয়াস নেওয়া হবে, ততই এ ধরনের গুজব তৈরি হওয়া এবং ছড়িয়ে পড়া কমবে মনে করি। এছাড়া বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সব বিষয়েই রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হওয়ার প্রবণতা থাকার কারণেও এ ধরনের গুজব তৈরি হয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে যেসব গল্প শুনে আসে, কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই সেগুলো বিশ্বাস করার প্রবণতার কারণেই এই প্রযুক্তির যুগেও সেসব গল্প সত্যি বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে থাকে।গুজব ছড়িয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা রাষ্ট্রবিরোধী কাজের শামিল এবং গণপিটুনি দিয়ে মৃত্যু ঘটানো ফৌজদারি অপরাধ। পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে ‘মানুষের মাথা লাগবে’ বলে সম্প্রতি ফেসবুকে গুজব ছড়ানো হয়, তা সম্পূর্ণরুপে মিথ্যাচার। আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায়, এই প্রযুক্তি নির্ভর সময়ে গুজবে কান দিয়ে মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করতে হবে কেন? যদি সত্যই কাউকে সন্দেহ হয়, তার গতিবিধি সন্তোষজনক না হয়, তবে বড়োজোর ওই সন্দেহাধীন ব্যক্তিকে প্রশাসনের জিম্মায় দেওয়া যেতে পারে। এর বাহিরে যারা আইনকে নিজের হাতে তুলে কাউকে পিটিয়ে মারছেন, তারা সকলেই সজ্ঞানেই মানুষ হত্যা করছেন বলে মনে করি আমি। তাই, গণপিটুনি দিয়ে মানুষ হত্যার সাথে জড়িত প্রতিটি ঘটনা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা সময়ের দাবী। এই ছাড়া অন্য কোনো উপায় আমার চিন্তায় আসে না।
আমাদের দেশে বিভিন্ন সময় গুজব সৃষ্টি করে নানা ধরনের সমস্যার দৃষ্টি করেছে। এই সমস্যা শুধু সমাজের ভেতরেই সীমাবদ্ধতা ছিল না, রাষ্ট্রীয় ভাবেও এর প্রভাব পড়েছিল। বর্তমানে ছেলে ধরার গুজব ছড়িয়ে এই ধরনের একটি রাষ্ট্রীয় সমস্যা সৃষ্টি করেছে এবং গুজব ছড়ানোতে প্রাণহানিরও ঘটনা ঘটছে, যা দেশের বিবেকবান মানুষকে মর্মাহত করেছে। সরকার অবশ্যই এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা আশা করি, মানুষের সচেতনতা এবং সরকারের উদ্যোগ গ্রহণের ফলে আমরা অচিরেই গুজব গজব থেকে মুক্তি পাব ইনশা-আল্লাহ।
Md.Sheikh Sayedi
LLB(Hons) LLM(Master's)
Mss in Victimology & Restorative Justice

University of Dhaka